রবীন্দ্র সংগীত
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে॥
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়--
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে॥
আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না--
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না মেলে না,--
ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে --
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
তাই হেরি তায় সকল খানে॥
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়--
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে॥
আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না--
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না মেলে না,--
ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে --
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥
***********
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়--
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়॥
***************
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানেআনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
*************
তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার।
তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার॥
তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার॥
যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি--
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন, মন রে আমার॥
নদীর জলে থাকি রে কান পেতে, কাঁপে যে প্রাণ পাতার মর্মরেতে।
মনে হয় যে পাব খুঁজি ফুলের ভাষা যদি বুঝি,যে পথ গেছে সন্ধ্যাতারার পারে মন, মন রে আমার॥
**********
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও।
আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও ॥
আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও ॥
যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে
আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে
এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও।
বিশ্বহৃদয়-হতে-ধাওয়া আলোয়-পাগল প্রভাত হাওয়া,
আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে
এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও।
বিশ্বহৃদয়-হতে-ধাওয়া আলোয়-পাগল প্রভাত হাওয়া,
সেই
হাওয়াতে
হৃদয়
আমার
নুইয়ে
দাও
॥
আজ
নিখিলের
আনন্দধারায়
ধুইয়ে
দাও,
মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও।
মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও।
আমার
পরান-বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃতগান--
তার নাইকো বাণী, নাইকো ছন্দ, নাইকো তান।
তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁই'য়ে দাও।
বিশ্বহৃদয়-হতে-ধাওয়া প্রাণে-পাগল গানের হাওয়া,তার নাইকো বাণী, নাইকো ছন্দ, নাইকো তান।
তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁই'য়ে দাও।
সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার নুইয়ে দাও ॥
*************
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।
তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥
তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥
তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।
আমি আকাশে পাতিয়া কান শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,
আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী।
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে,
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥
************
ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা,
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধভরে তন্দ্রাহারা॥
আমি সদা অচল থাকি, গভীর চলা গোপন রাখি,
আমার চলা নবীন পাতায়, আমার চলা ফুলের ধারা॥
ওগো নদী, চলার বেগে পাগল-পারা,
পথে পথে বাহির হয়ে আপন-হারা—
আমার চলা যায় না বলা-- আলোর পানে প্রাণের চলা--
আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা॥